Bengali Short Motivational Story বেস্ট মোটিভেশনাল ছোট গল্প

কখনো কখনো জীবনে এমন সমস্যা আসে, এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা আমাদের একেবারে ভেঙেচুরে দেয়, আর আমরা জীবনের কাছে হার স্বীকার করে নিতে থাকি, দুঃখে ব্যথিত হয়ে নিজেকেই নিজে দোষারোপ করতে থাকি,

সমস্যায় জীবন ভরে উঠতে থাকে কিন্তু তার থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ খুঁজে পাইনা, না কেউ আমাদের দুঃখ গুলোকে বুঝতে চেষ্টা করে আর না আমরা আমাদের কষ্ট গুলোকে কাউকে বোঝাতে পারি, মনে মনে ভিতর থেকে অসহায় হয়ে পড়ি,

Best top 3 motivational story in bengal

মানুষ যখন অসহায় হয়ে পরে তখন সে বুঝে উথতে পারেনা তার তখন কি করনীয়, সমস্ত দিক থেকে যেন ঘিরে ধরে অন্ধকারের একরাশ কালো ছায়া, আর তখনি প্রয়োজন হয় প্রেরনা মূলক কিছু নীতি, যুক্তি ও পরামর্শ;

Short Motivational story in Bangla font

আজ আমরা এমন তিনটি ছোট মোটিভেশনাল স্টোরি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো যে গুলো প্রত্যেক সমস্যা দূর করার নতুন পথ বলে দেবে, আপনার মনের সকল কষ্ট দুর করে জীবনকে সহজ করে তুলতে সাহায্য করবে,

• প্রথম মোটিভেশনাল ছোট গল্প

একটি শহরে এক ধনী ব্যক্তি ছিল, ব্যবসা বাণিজ্যে অর্থ বৈভব সম্মান কোনো দিক থেকেই তার কোনো কমতি ছিলো না, সকল প্রকার সুখ সম্পত্তি ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক জীবনের সঙ্গী,

কিন্তু হটাৎ করে এক সময়ে তার এই বিলাস বহুল জীবন কোনো এক ঘটনা চক্রে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, এবং  সমস্ত বিষয় সম্পত্তি ব্যবসা সব কিছু হারিয়ে যায়, যা কিছু এতদিন ধরে উপার্জন করেছিল সব কিছুর সমাপ্তি ঘটে,

এমন অবস্থায় সে মনের দিক দিক থেকে একেবারে বিষাদ গ্রস্থ হয়ে পড়ে, আর মনে মনে ঠিক করে ফেলে এ জীবন আর রেখে লাভ কি, মরে গিয়ে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়ে,

একদিন সে শহরের বাইরে জনবহুল এলাকা ছেড়ে অনেক উঁচু পাহাড়ের উপরে ওঠে এবং সেখান থেকে সে জীবন দিয়ে মুক্তি পাবে বলে প্রস্তুত হয়ে পড়ে, আর তার এই ঘটনা কোনো এক মহান ব্যাক্তি লক্ষ্য করেন, আর তাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি কেনো এই পথ বেছে নিলেন,

তখন ঐ ব্যাক্তি তার জীবনের সব ঘটনা বলেন, একটা সময় ছিলো যখন আমি অনেক প্রভাবশালী আর অনেক ধন সম্পত্তির মালিক ছিলাম, কিন্তু এখন আমার কাছে তার আর কিছুই নেই, জীবন শূন্য হয়ে গেছে, আর এই জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে তাই আমার আর এই জীবনের ভার বহন করার ক্ষমতা নেই, আর আমি তাই এই পথ বেছে নিয়েছি,

ঐ মহান ব্যাক্তি তার সব কথা শোনার পর তাকে বললেন তুমি কেবল তোমার অর্থ সম্পত্তিকে হারিয়েছ তোমার জীবন এখনো তুমি হারাওনি, অর্থ রোজকার করার দক্ষতা সেদিনও তোমার কাছে ছিলো আর আজও আছে,

সময় কখনো এক রকম থাকেনা কাল সহজ ছিলো আজ কঠিন, আর বিশ্বাস রাখো নিজের উপর তুমি চাইলে তোমার জীবনের সকল সমস্যার সমাধান তুমি নিজেই করতে পারবে, তোমার জীবন সবার সহজ হয়ে উঠবে,

বিশ্বাস হলো কঠিন সময়ের সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার, আর নিজের উপর আস্থা সকল সমস্যার অবসান ঘটাতে পারে, মানুষের জীবনে সমস্যা আসে তার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য, সমস্যা মানুষকে আরও কঠিন ও অভিজ্ঞ করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে,

তাই নিজের উপর এক বুক বিশ্বাস নিয়ে ফিরে যাও সেই শহরের ভিড়ে, যেখানে তুমি সব হারিয়ে এসেছো সেখান থেকেই আবার নতুন করে শুরু করো, আর নিজের পরিশ্রম এর সব টুকু উজাড় করে দাও, তুমি আবার পারবে কারণ তুমি হেরেছ যতটুকু তার থেকে বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ, আর অভিজ্ঞ ব্যাক্তির কাছে কোনো কাজই কঠিন নয়,

ঐ মহান ব্যাক্তির কথা শুনে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলা লোকটা আবার নতুন করে বাঁচার, স্বপ্ন দেখার ও তার বানিজ্য শুরু করার সুযোগ এবং সাহস পেলো, আর মনে মনে ভাবলো ঠিকই তো আমি তো কেবল আমার ধন সম্পত্তি হারিয়েছি, নিজেকে তো হারাইনি, আর হারানোর পেছুনে যেটুকু সময় ব্যয় হোয়েছে তার বেশি সময় এখনো আমার সামনে অপেক্ষা করছে,

আর সে আরোও ভাবলো আমার সকল অর্থ ও টাকা আমার দ্বারা হয়েছিলো, টাকা ও অর্থের জন্য আমি হইনি, অর্থ আমার পরিচয় নয় আমার পরিচয় আমি নিজেই, সে নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করলো নিজের পরিশ্রম ও মনোবল তাকে আবার ধনবান ব্যাক্তি করে তুললো,

এই কাহিনী আমাদের একটাই শিক্ষা দেয় সময় ও পরিস্থিতি যতোই খারাপ হোক না কেনো তা এক সময় ঠিকই বদলাবে, যদি কখনো আপনার জীবনে সমস্যা আসে তাহলে ঐ সময়ই হলো নিজেকে চিনে নেয়ার ও নিজের ক্ষমতা ও নিজেকে বুঝে নেবার, নিজের সমস্যাকে ভয় না পেয়ে তার সম্মুখীন হবার,

• দ্বিতীয় প্রেরনা মূলক ছোট গল্প

একবার এক পিতা ও পুত্র রাত্রিতে আহার গ্রহণের জন্য বসেছে, পুত্রের মা থালা করে সবজি ও পুড়ে যাওয়া রুটি তাদের কাছে নিয়ে এসেছে, পুত্রের মা জানতো যে রুটি গুলি ঝলসে গেছে আগুনের আঁচ লেগে, তাই তিনি খাবার দেওয়ার সময় নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন,

তখন পুত্রের বাবা তার পত্নীকে বললেন তুমি ভেবোনা চিন্তা করনা, আমার ঝলসে যাওয়া শক্ত রুটি খুব খেতে ভালো লাগে, এই কথা শুনে পুত্র অসন্তোষ অনুভব করলো, আর তার পিতাকে বলল পিতা আপনি সত্যি বলছেন ঝলসানো রুটি আপনার খেতে ভালো লাগে,

পিতা বললো তোমার মা আজ সারাদিন কাজ করেছেন, আর তিনি হয়তো আজ সত্যিই অনেক ক্লান্ত, আর পুড়ে যাওয়া রুটি এমন কিছু নয়, কিন্তু মুখ থেকে বলা কঠিন কোনো শব্দ মানুষের মনে অনেক বড়ো আঘাত সৃষ্টি করতে পারে,

এই বলে পিতা তার পুত্রকে আরও বললো তুমি জানো পুত্র আমাদের জীবন ভুল ত্রুটি দিয়ে ভরা, আমি এমন কোনো মানুষ দেখিনি যিনি একেবারে পরিপূর্ন, যার মধ্যে কোনো দোষ বা ভুল নেই,

আর আমি জীবন থেকে এটাই শিখেছি একে অপরের ভুল গুলোকে স্বীকার করে নিতে হয়, অন্যের ভুল গুলোকে ক্ষমার মাধ্যমে ও একে অপরকে তার ত্রুটি দিয়ে পছন্দ করতে জানতে হয়, তবেই সম্পর্কে সফলতা আসবে,

এই ঘটনা থেকে আমরা শিখতে পরি একে অপরকে যদি ক্ষমা করতে শিখতে জানি তাহলে জীবন হবে অনেক সহজ সরল ও আনন্দ ভরা মধুময়,

• তৃতীয় মোটিভেশনাল ছোট গল্প

একবার এক পিতা তার বদমেজাজি পুত্রকে একটি পাত্রে কিছু পেরেক দিলো, এবং বললো যখন খুব রাগ হবে এই পাত্র থেকে একটি করে পেরেক নিয়ে দেয়ালে পুঁতে ফেলতে, এর পর থেকেই যখন তার রাগ হতো সে দেয়ালে একটি করে পেরেক পুঁতে দিত, এভাবে রোজ সে এই কাজ করতে লাগলো,

এভাবে রোজ এই কাজ করতে করতে একসময় সে ধীরে ধীরে বুঝতে পারলো, পেরেক পোঁতার বৃথা পরিশ্রম না করে যদি রাগকে নিয়ন্ত্রন করে নেওয়া যায়, তাহলে তাকে এই ফালতু পরিশ্রম করতে হবে না, নিজের মধ্যে এই ভাবনার উদ্ভব হওয়ার পর থেকে দেয়ালে পেরেক পোঁতার সংখ্যা কম হতে থাকলো, এক সময় সে সারাদিনে একটিও পেরেক পুঁতলো না,

এবং পুত্র এই ঘটনার কথা পিতাকে খুশি মুখে ও নম্র ভাবে জানালো, পিতা তখন বললো যখন এবং যেদিন তোমার মনে হবে, তুমি একেবারে রাগ মুক্ত হয়েছ সেদিন তুমি ঐ দেয়াল থেকে একটি একটি করে তোমার পোঁতা পেরেক গুলোকে উপরে নিও,

পুত্র তাই করলো, একদিন এমন আসলো ওই পেরেক পোঁতা দেয়ালে একটিও পেরেক দেখা গেলো না, এবং এই কথাও সে তার পিতা কে জানালো, যে সে তার নিজের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণে করে নিতে পেরেছে এবং দেয়ালের সব কটি পেরেক সে খুলে নিয়েছে,

তখন পিতা তার পুত্রকে নিয়ে দেয়ালের সামনে এসে দাড়ালেন এবং বললেন, তোমার পোঁতা পেরেকের আঘাতে দেয়ালের গায়ে যে ছিদ্র হয়েছে তুমি কি ঐ ছিদ্র গুলো বন্ধ করতে পারবে এবং দেয়ালটিকে আগের মতো করে দিতে পারবে, পুত্র বলল পিতা তা করা আর সম্ভব হবে না,

পিতা তখন পুত্রকে বললো আমাদের জীবনটাও ঠিক এই রকমই, রাগ আর ক্রোধের বসে কোনো কিছু করে ফেললে কিংবা কাউকে কোনো আঘাত দিয়ে কথা বলে দিলে, তাহলে তার মধ্যে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় তা আর আমরা ঠিক করতে পারিনা,

তাই যখনি কোনো বিষয় নিয়ে রাগ আসবে বা কারোর ব্যবহারের প্রতি তুমি ক্ষুদ্ধ হবে, তখন রেগে না গিয়ে নিজেকে সংযত নিতে হবে, কখনো কারো মনে দুঃখ দিয়ে কথা বলা উচিৎ নয়, তুমিতো রাগের বশে তাকে দুটো কথা বলে নিজের রাগটা মিটিয়ে ফেলতে পারবে, কিন্তু যে মানুষটি তোমার ব্যবহারে কষ্ট পাবে সে তোমার বলা কথা গুলো আর তোমার খারাপ ব্যবহার সারাজীবন মনে রেখে দেবে,

তাই এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি, যখনি কারোর কোনো কথা ভালো লাগবে না বা যখন কোনো বিষয়ে মন খারাপ থাকবে তখন নিজের উপর বিশ্বাস হারালে চলবে না এবং কারোর উপর রাগ দেখানো মোটেও ঠিক নয়, এই সময় নিজের বুদ্ধি ও ধৈর্যকে কাজে লাগাতে হবে,