2022 Bangla Love Story Golpo {সুন্দর চোখ} Beautiful eyes

আজ আমি আপনাদের সাথে একটি নতুন ভালোবাসার গল্প (Bangla love story ) সেয়ার করতে চলেছি, যে গল্পটি লেখা হয়েছে দুটি সুন্দর চোখ কে কেন্দ্র করে। এই পৃথিবীতে কতো কিছু দেখার জিনিস আছে, কতো ভালো লাগার জিনিস আছে, চারিদিকে কতো সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারিদিকে আছে.

bangla-love-story-golpo-beautiful-eyes

“তুমি আমার চোখ সম্পর্কে সবসময় জানতে চাও তাইনা প্রিয়?
এই চোখ হলো সেই দরজা যা সবসময় নদীর দিকে খোলে”

Bangla Love Story valobasar golpo

সারা শরীরের মধ্যে তার দুটি সুন্দর চোখ আমার সব চেয়ে বেশি পছন্দ। ঠিক যেনো কোনো অন্ধকার রাতে ফোর হুইলার গাড়ির হেড লাইটের আলো তার দুটি চোখ, যা সবার আগে চোখে পড়ে।

এটা বলা ভুল যে চোখ দুটো অনেক বেশি সুন্দর ও সুশ্রী, সুন্দর ও কুৎসিৎ এর পার্থক্য করার ক্ষমতা সকলেরই থাকে, আমার ক্ষেত্রেও অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু আমি ওই চোখের ব্যাপারে শুধু এটুকুই বলতে পারি যে ‘সুন্দর না হাওয়ার সত্যেও এর মধ্যে এমন এক মায়াবী আকর্ষন ছিলো, যা খুব সহজেই আকর্ষিত করতে পারে।

ওই দুটি চোখ আর আমার পরিচয় এক হাসপাতালে হয়।
যেখানে আমার এক পরিচিতের অপারেশন পর সে জীবনের শেষ মুহূর্তের নিশ্বাস গুলোকে অনুভব করছিল।

এমনিতেই আমি অসুস্থ মানুষের অবস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করা থেকে বিরত থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। রোগীরর কাছে গিয়ে তাকে মিথ্যা সান্তনা দেওয়া আমার পক্ষে অযৌক্তিক বলে মনে হতে থাকে।

নিজের ভালো না লাগার সত্যেও, পরিবারের লোকেদের কথা মেনে চলার জন্য মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়া পরিচিত মানুষটিকে বাঁচার রসদ জোগাতে যেতে হয়েছিলো। জানিনা কেন হাসপাতালের নাম শুনতেই মনে অসস্তি জেগে উঠে।

হ্যাঁ আমি যে চোখের কথা বলছিলাম, যা আমার খুব পছন্দ ছিলো। পছন্দ! এই ব্যাপারটার মধ্যে যথেষ্ঠ নিজস্বতা থাকে। এটা খুবই সম্ভব যে যদি আপনি এই চোখ দেখতেন আপনার হৃদয় ও মনে বিশেষ ভাবনার উদ্বেগ না হয়ে পারতো না। যদি জিজ্ঞাসা করা হয় চোখ দুটি কেমন তাহলে হয়তো এটাও বলে দিতেন কেমন আবার! চোখ চোখের মতই এতে আবার বলার কি আছে!

বিশ্বাস করুন যখন আমি ওই মেয়েটির দিকে তাকাই সর্ব প্রথম তার দুটি সুন্দর চোখ আমাকে আকর্ষন করে। সে বোরখা পড়ে ছিলো, কিন্তু মুখের নাকাব ছিলো উম্মুক্ত, আর অল্প ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছিলো তার ওই দুটি ভাসমান চোখ। হতে ছিলো ঔষধের বোতল, হাসপাতালের জেনারেল বারান্দার মধ্যে দিয়ে একটি বাচ্চা ছেলের সাথে হাঁটছিলো।

আমি ওর দিকে দেখা মাত্রই তার চোখে ছোট না বড়, কালো না বাদামী, নীল না সবুজ এক অদ্ভুত ধরনের আভা উদ্ভব হয়। আমার পা হটাৎ থেমে গেলো সেও দাঁড়িয়ে পড়লো, আর তৎক্ষণাৎ সে তার সাথে থাকা বাচ্চা ছেলেটির হাতে টান দিলো আর স্তব্ধ অথচ অল্প রাগান্বিত কণ্ঠে বলল ঠিক করে চলতে পারছিস না নাকি? বাচ্চা টি হাত ছিনিয়ে নিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলো আরে ঠিকই যাচ্ছিতো তুমিইতো অন্ধ।

আমি একথা শোনা মাত্রই ওই মেয়ের সুন্দর চোখের দিকে দ্বিতীয়বার দেখলাম। তার সব অস্তিত্বের মধ্যে শুধু চোখ দুটোই চোখে পরলো যা পছন্দ হলো। আমি আরো কাছাকাছি এগিয়ে গেলাম, সে চোখের পলক স্থির রেখে আমার দিকে তাকালো আর জিজ্ঞাসা করলো, আচ্ছা এখানে এক্সরে কোথায় করে বলতে পারবেন।

কোইন্সিডেন্স ব্যাপার হলো সেদিন এক্সরে ডিপার্টমেন্টে আমারই এক বন্ধু কাজ করছিল। আর আমি তার সাথেই দেখা করার জন্য এসেছিলাম। আমি ওই মেয়েটিকে বললাম আসুন আমি আপনাকে এক্সরে ডিপার্টমেন্ট এ নিয়ে যাচ্ছি, কারণ আমি ওখানেই যাচ্ছি। মেয়েটি বাচ্চাটির হাত ধরলো আর আমার পিছু চলতে শুরু করলো।

আমি এক্সরে ডিপার্টমেন্টে গিয়ে কম্পাউন্ডার কে ডক্টর এর কথা জিজ্ঞাসা করতে সে বললো ডক্টর এখন ব্যস্ত আছেন। ভিতরে এক্সরে হচ্ছে, তিনি সেই কাজেই ব্যাস্ত।
দরজা বন্ধ ছিলো আর বাইরের রোগীদের ভিড় কাটিয়ে দরজার কাছে গিয়ে টোকা দিলাম, কোনো সাড়া না পেয়ে আবার দরজায় টোকা দিতেই, ভীতির থেকে রাগান্বিত স্বরে আওয়াজ আসলো, কে দরজায় ধাক্কা দেয়, কিন্তু আমি আবার টোকা দিলাম অমনি সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে ডক্টর অন্য কিছু বলার জন্য প্রায় প্রস্তুত কিন্তু আমাকে দেখে সে নিজেকে সামলে নিল। আর বললো ওহ তুই, হ্যাঁ আমি, দফতরে গিয়েছিলাম বললো তুই এখানে, আয় ভিতরে আয়।

আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম আর বললাম আসো। বাচ্চাটিকে বাইরে রেখে আসো। সে ভীরু পায়ে আমার সাথে এক্সরে রুমে ঢুকলো। আমার বন্ধু এক্সরে ডক্টর আস্তে করে অনেক জিজ্ঞাসা করলো কে ইনি। আমি উত্তর দিলাম জানিনা কে। এক্সরে ডিপার্টমেন্টের কথা জিজ্ঞাসা করেছিলো, আমি বললাম চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি, এটুকুই।

ভিতরে আরো চার পাঁচ জন রোগী ছিলো, ডক্টর দ্রুত তাদের স্ক্রিনিং করলো আর তাদের যেতে বললো। এর পর রুমের মধ্যে আমরা শুধু দুজন রয়ে গেলাম। ডক্টর বললো এনার কি প্রবলেম আছে? আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলাম কি সমস্যা হচ্ছে আপনার, এক্সরে করার জন্য কোন ডক্টর আপনাকে পাঠিয়েছেন? অন্ধকার ঘরে মেয়েটি আমার দিকে তাকালো এবং বললো আমি জানিনা কি হয়েছে আমার, আমাদের ডক্টর প্রেপসিশন লিখে দিলেন আর বললেন এক্সরে করিয়ে নিয়ে আসবেন।

আমার ডক্টর বন্ধু মায়েটিকে মেশিনের কাছে আসতে অনুরোধ করলো এমন সে মেশিনের কাছে যেতে গিয়ে পা হোচট খেলো আর ডক্টর ধমকের সাথে বললো আরে দেখে আসতে পারছেন না নাকি। মেয়েটি চুপ থাকল।

ডক্টর তার বরখা খুলতে বললো এবং স্ক্রিনের পিছুনে দার করিয়ে দিল। এক্সরে মেশিনের সুইচ চালু করলো আমি আয়না বেষ্টিত কাচের দিকে তাকালাম তার পাঁজর দেখা যাচ্ছে, আর তার হার্ট কালো সুতোর ন্যায় পাঁজরের এক কোণে আন্দোলিত হচ্ছিল। ডক্টর পাঁচ ছয় যাবৎ মিনিট হাড় ও মাংসপেশি দেখতে থাকলো। এর এক্সরের সুইচ বন্ধ করে দিল।

আর রুমের আলো জ্বেলে আমার কাছে এসে ডক্টর বললো বুক একদম পরিষ্কার, একথা শুনে জানিনা মেয়েটি কি ভাবলো তার নিজের দুপাট্টা ঠিক করলো, আর বোরখা খুঁজতে শুরু করলো, বোরখা ব্রেঞ্চের এক কোণে পড়ে ছিলো। আমি এগিয়ে গিয়ে বোরখা হতে নিলাম আর তার দিকে হাত বাড়িয়ে বললাম এই নিন।

ডক্টর রিপোর্ট লিখল আর তাকে জিজ্ঞাসা করলো তোমার নাম কি? মেয়েটি বোরখা মাথায় দিতে দিতে বললো জী আমার আমার নাম রেহনুমা। আমার ডক্টর বন্ধু সাদিক তার নাম রিপোর্ট পেপারে লিখল এবং তাকে দিয়ে দিলো। আর বললো যাও এটা তোমার ডক্টর কে দেখিয়ে দিও। মেয়েটি কাগজটি নিয়ে কামিজের ভিতর সাবধানে রেখে দিল।

যখন সে এক্সরে রুম থেকে বাইরে এলো আমি এমনিই তার পিছু পিছু বাইরে এলাম, কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার ডক্টর বন্ধু সাদিক আমাকে কিছু একটা সন্দেহ করেছে, সাধারণত সবাই যেটা করে থাকে তেমনিই কিছু।
আমি যতোটা অনুমান করতে পেরেছি সে এটাই মনে করেছে যে ওই মেয়েটির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক আছে।

কিন্তু আমার পাঠকরা নিশ্চয় এতক্ষণে এটা বুঝতে পারছেন যে তার সাথে আমার কোনোই সম্পর্ক নেই, কেবল তার চোখ দুটো আমার ভীষন ভাবে আকর্ষিত করেছিলো।

সে বাচ্চাটির আঙ্গুল ধরে হেঁটে চললো, অটো রিক্সা স্ট্যান্ডের দিকে। আমিও তার দিকেই চলতে থাকলাম, যখন সে স্ট্যান্ডে পৌঁছালো আমি মেয়েটিকে অর্থাৎ রেহনুমা কে জিজ্ঞাসা করলাম তুমি কোথায় যাবে? সে ৫ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামের নাম বললো, আমিও মিথ্যা করেই বললাম আমিও ওদিকেই যাবো। চলো একই অটোতে উঠি তাহলে আমার ও একটা সুযোগ মিলবে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবার। সে আমার এই কথা শুনে কিছু বললো না, তবে আমার এই কথা শুনে যে বিরক্ত বোধ করছে না এটা স্পষ্ট বোঝা গেলো।

তার হাত ধরে অটোর শীটে বসিয়ে দিলাম, আর আমি অনুভব করলাম যে কোনো মানুষের আপন হতে হয়ত বেশি সময় লাগেনা। জানিনা এটা মনের ভুল না ঠিক। ইচ্ছে হচ্ছিলো তার পাশেই বসি, কিন্তু এটাও ভয় হলো যে কেউ যদি একসাথে দেখে ফেলে! তাই বাচ্চাটিকে ও তাকে এক কাছে বসিয়ে আমি অন্য শীটে বসলাম।

অটো চলতে শুরু করলো তার বাড়ির দিকে, আমি নিজে থেকেই আমার পরিচয় দিলাম আমার নাম সবুর। সকলে সবু বলে ডাকে, আমার এই কথা শুনে সে হাসলো। আর তার হাসি মিশ্রিত চোখ দুটো আরো সুন্দর হয়ে উঠলো। আমি আমার জীবনে অগনিত সুন্দর চোখ দেখেছি কিন্তু তার চোখ অত্যন্ত সুন্দর।

সাথে থাকা বাচ্চা কে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার বাড়ি আর কতো দূর, সে হাত দেখিয়ে বললো ও যে বড় গাছটা আছে তার পাশেই। বাড়ির কাছেই বড়ো বাজার আর বাজারে ভিরও ছিলো, রাস্তাও খুব একটা মসৃণ নয়, তার মাথা বার বার ঠোকা লাগছিল, ইচ্ছে হচ্ছিলো মাথাটা আমার কাঁধে রাখি আর ওই সুন্দর চোখ দুটো আজীবন ধরে দেখে যাই।

কিছু সময় পর তার বাড়ির কাছে এসে অটো পৌঁছালো। বাচ্চাটি অটো থামাতে বললো, অটো থামতেই বাচ্চাটি লাফিয়ে নামলো, মায়েটি অটোতে বসে রইলো, আমি তাকে বললাম তোমার বাড়ি চলে এসেছে, সে অদ্ভুত ধরনের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো, আর বাচ্চাটির নাম ধরে ডাক দিয়ে বললো মনু কোথায় গেলি তুই।

আমি বললাম মনু কে? সে বললো ওই যে বাচ্চাটি আমার সাথে ছিলো। আমি বললাম এই তো অটোর পাশেই দাড়িয়ে আছে। সে বলল মনু আমাকে নামিয়ে দে! মনু তার হাত ধরলো আর আর খুব সাবধানতার সাথে তাকে নিচে নামালো। আমি হতবাক হয়ে রইলাম, আর আমার এই হতভম্বের কারণ হলো মেয়েটি অন্ধ, আর পাঁচটা মানুষের মত এই পৃথিবীর সৌন্দর্য তার ওই সুন্দর চোখ দুটি দিয়ে দেখার ক্ষমতা ছিলনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *