How To Control Your Anger in Bengali Rag Komanor Upay

নীতিকার গণ যে ধরণের রাগ বা ক্রোধকে আবশ্যক বলেছেন, সে বিষয়ে তাঁরা এও লিখে গেছেন যে সেটি যেন বিবেক সম্মত হয়। ক্রোধ এবং রাগকে যদি সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে দেওয়া হয় তাহলে অনীতি, অন্যায়ের বিরোধিতা, দুষ্ট তত্ত্বের দমন এবং অসুরতার প্রতিকার করা কিভাবে সম্ভব হবে?

ঋষি মনীষী অনীতি, অন্যায়, দুষ্টতা এবং অসুরতার প্রতিরোধ করার জন্য সাত্ত্বিক ক্রোধের আবশ্যকতার কথা বলে গেছেন।

control-your-anger-bengali

এখানে যে বিবেকহীন ক্রোধের চর্চা করা হচ্ছে সেটি সুনিশ্চিত রূপে অমঙ্গলকারক ও ক্ষতিকর। কবি বানভট্ট এই ধরণের মনোবিকারের সম্বন্ধে বলেছেন, ‘অত্যধিক ক্রোধী মানুষ চোখ থাকতেও অন্ধের সমতুল্য।’ এই সম্বন্ধে বাল্মীকি রামায়ণে বলা হয়েছে, ‘ক্রোধ এক প্রাণঘাতক শত্রু এবং সর্বনাশের পথ।’

Why control your anger bengali

ক্রোধের আগমন হলেই শরীরের মাংসপেশী সঙ্কুচিত হতে থাকে। হাত ও পায়ের মাংসপেশীগুলি বিশেষ রূপে সঙ্কুচিত হয়, কারণ লড়াই করার সময় এই অঙ্গগুলি সবচেয়ে বেশী সক্রিয় থাকে। চেহারায় টান ধরে। মাংসপেশীর সঙ্কোচন ও প্রসারণের পরিণামে সারা শরীরের উপর পড়ার ফলে অন্যান্য অঙ্গগুলিতেও সঙ্কোচন প্রসারণ শুরু হয়ে যায়।

তাছাড়া ক্রোধাবস্থায় শ্বসন ক্রিয়াও অত্যন্ত প্রভাবিত হয়। বৈজ্ঞানিকদের মতে এ সব এই কারণেই হয় কেন না ক্রোধাবস্থায় শারীরিক জীবনীশক্তি দ্রুতগতিতে ক্ষরণ হতে শুরু করে। এর পূর্তির জন্যই শ্বসন ক্রিয়াও তীব্র হয়ে থাকে। হৃদপিন্ড আগের চাইতে অধিক ক্রিয়াশীল হবার ফলে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়।

এই সর্বনাশা ক্রোধকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? বহুবার দেখা গেছে, ক্রোধ না করার সংকল্প সত্ত্বেও অনেক সময় এমন পরিস্থিতি এসে পড়ে,

যখন সমস্ত সংকল্প বিকল্প ভঙ্গ করে ক্রোধের আবেশ ফুটে ওঠে। মন শান্ত হবার পরই ক্রোধের উৎপত্তির কথা অনুভব করা যায়। কেউ যখন কারো উপর ক্রুদ্ধ হয়ে তার ক্ষতি করতে পারে না, তখন সে নিজের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে, নিজেকেই শাস্তি দেয় এবং নিজেরই ক্ষতি করতে আরম্ভ করে। ক্রোধ মানুষকে পাগলের পর্যায়ে পৌঁছে দেয়।

বুদ্ধিমান এবং মনীষী ব্যক্তিগণ ক্রোধের কারণ দেখা দেওয়া সত্ত্বেও কখনই নিজেদের উপর ক্রোধের আক্রমণ হতে দেন না। তাঁরা বিবেকের আশ্রয় নিয়ে সেই অনিষ্টকর আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিজেদের ক্ষতির কবল থেকে রক্ষা করে থাকেন।

জীবনে প্রায় প্রতিদিনই এই ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকে যাদের মধ্যে কয়েকটির জন্য মনে আনন্দ ও আহ্লাদ জেগে ওঠে আবার কয়েকটিকে দেখে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে যে ঘটনাগুলির স্বয়ং নিজের সাথে সম্পর্ক, তাদের কয়েকটির কারণে ক্ষেদ, ক্ষোভ, ক্রোধ, উত্তেজনা, দুঃখ, বিষাদ এবং রোষের মনোভাব উৎপন্ন হতে শুরু করে।

এই ভাবনাগুলি, যাদের কারণে শারীরিক সঞ্চালন ব্যবস্থা উত্তেজিত হয়ে ওঠে তাদের আবেগ বা সংবেগ বলা হয়, যাদের প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্র কেবল মস্তিষ্কই হয়ে থাকে।

মস্তিষ্ক যেহেতু সম্পূর্ণ শরীরকে নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চালন করে, অতএব সেখানে কোন পরিবর্তন হলে তার প্রভাবও সুনিশ্চিত রূপে সারা শরীরের উপর পড়ে। এটিই ছিল মনোবিজ্ঞানীদের চিরকালের গবেষণার বিষয়।

ক্রোধ, ঘৃণা, কুন্ঠা অথবা হতাশা রূপী মানসিক উদ্বেগ ও চাপের ফলে কেবল আহার্যবস্তুগুলি হজম হতেই দেরী হয় না বরং এর ফলে পেটের অন্যান্য গন্ডগোলও উৎপন্ন হতে পারে এমন কি আলসার পর্যন্ত হতে পারে এবং শরীরে বৃদ্ধাবস্থার লক্ষণও প্রকট হতে দেখা যায়।

শরীর সঞ্চালন ব্যবস্থার উপর মনোবিকারের এমন অজস্র দুষ্প্রভাব দেখা দেয় এবং তাদের মধ্যে একমাত্র ক্রোধই হচ্ছে সর্বাধিক বিষাক্ত ও দ্রুত প্রভাব বিস্তার কারী মনোবিকার।

আবেগ বা সংবেগ যখন তীব্ররূপ ধারণ করে তখন অন্তঃস্রাবের মাত্রা কম হতে থাকে এবং পাচক ক্রিয়াতেও গোলমাল দেখা দেয়। আবেগ যখন সুস্থির থাকে তখন পাচক ক্রিয়াও সঠিকরূপে পরিচালিত হয়। অন্তঃস্রাব কি পরিমাণে হওয়া উচিত সেটি কেবল আবেগের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। যেমন ভয়ের আবেগ প্রচন্ড হলে এর প্রভাব কম হয়ে থাকে আবার ক্রোধের আবেগ প্রচন্ড হলেই অধিক হয়ে পড়ে।

ক্রোধের কারণে উৎপন্ন হওয়া বিষাক্ত শর্করা জাতীয় পদার্থগুলি পাচন শক্তির পক্ষে অত্যস্ত ক্ষতিকারক। এরা রক্তকে বিকৃত করে শরীরকে পিঙ্গলবর্ণ করে তোলে, শিরা উপশিরায় টান ধরে , কটিশূল ইত্যাদির জন্ম দেয়।

ক্রোধান্বিতা মায়ের স্তন্যপান করলে বাচ্চার পেটের অসুখ করে এবং যে সমস্ত মা অত্যন্ত খিটখিটে স্বভাবের, তাদের দুধ কখনও কখনও এতটাই বিষাক্ত হয়ে যায়, যা বাচ্চার শরীরে অজীর্ণরোগেরও সৃষ্টি করে থাকে। ক্রোধের ফলে শারীরিক শক্তি হ্রাস পায় এবং মানসিক শক্তিরও ক্ষরণ হয়।

ক্রোধের কারণে মানুষের যতটা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়, তার সাহায্যে সে অনায়াসে নয় ঘন্টা কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। শক্তি নাশ করার সাথে সাথে ক্রোধ শরীর ও চেহারায় নিজের প্রভাব বিস্তার করে মানুষের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করে দেয়।

সুতরাং ক্রোধের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে আমাদের নিজেদেরই লাভ হবে।

সামাজিক জীবনে কখনও কখনও ক্রোধের প্রয়োজন দেখা দেয়। যে সব মানুষের মধ্যে দুষ্প্রবৃত্তি গভীরভাবে স্থান করে নিয়েছে, তাদের মধ্যে দয়া ও বিবেক জাগিয়ে তুলতে প্রচুর সময় লেগে যায় এবং ততদিনে তারা অত্যধিক অনর্থ করে ফেলে।

যখন কোন ব্যক্তিপ্রদত্ত হৃদয় পীড়া ক্রমশঃ অসহ্য হয়ে ওঠে, তখন তার উপর ক্রোধ প্রদর্শন আবশ্যক হয়ে পড়ে। সেই ক্রোধের জন্ম উদ্বেগ উত্তেজনার মাধ্যমে নয় বরং বিবেকসম্মতই হয়ে থাকে। জনসাধারণের ক্রোধে প্রতিকার এবং প্রতারণার উগ্রতা দেখা যায়। তাদের এই ক্রোধ উত্তেজনা এবং আবেগের রূপেই উৎপন্ন হয়।

এতে সত্য অসত্যের বিবেক শক্তি চাপা পড়ে যায় এবং লড়াই ঝগড়া, তিক্ততা, মারামারির দ্বারাই তার অভিব্যক্তি ঘটে। ক্রোধের সাথে মনের অন্যান্য বিকারগুলিরও ঘনিষ্ট সম্বন্ধ থাকে। অস্থিরতা, উৎকন্ঠা, উদ্বেগ, অহংকার, অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি হল তার সহচর।

ক্রোধের অভিব্যক্তি দমিয়ে রেখে মনে মনে দীর্ঘদিন জ্বলতে থাকাই শত্রুতায় পরিণত হয়। এই শত্রুতা ক্রোধের চেয়েও ভয়ঙ্কর।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়োর পরিণামেই ক্রোধের সৃষ্টি হয়। কোন অনুচিত কাজ চোখে পড়লে কিংবা কোন ক্ষতি হয়ে গেলে, তার সঠিক কারণ নির্ধারণ করার বিষয়ে কখনই তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।

স্মরণ রাখা উচিত যে, বিচার করতে গিয়ে অনেক সময় কারণ খোঁজ করাতেই ভুলত্রুটি হয়ে যায়। সুতরাং অনুচিত অথবা ক্ষতিকারক কাজের ঘটনাস্থল থেকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে সরে যেতে হয়।

Rag komanor upay

কোন সুন্দর বাগানে পায়চারী করা কিংবা কোন প্রিয়জনের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করাই ভাল। তা না হলে অন্ততঃ একগ্লাস ঠান্ডা জল পান করে ক্রোধকে প্রশমিত করা দরকার, এই আবেগকে প্রশ্রয় দিলে নিজেরই ক্ষতি এবং প্রশমিত করা হলে নিজেরই লাভ।

rag-komanor-upay-bangla

ক্রোধের সৃষ্টি হলে, সঙ্গে সঙ্গে যে কোন প্রকারের শারীরিক পরিশ্রমে নিযুক্ত হওয়া উচিত। কোন কাজের বিপরীত পরিণাম দেখা দিলে স্বাধ্যায় কিংবা কোন মনোরঞ্জনে নিযুক্ত হয়ে পড়া ভাল। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যলাভের জন্য ব্যায়ামকে অনিবার্য করে নেওয়া উচিত।

ক্রোধের মতই চিন্তা, দুঃখ, ব্যথা, এবং অন্যান্য আবেগগুলিকেও নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল শেখা উচিত। জীবনের প্রতি সুযম দৃষ্টিভঙ্গী অবলম্বন করা হলে যাবতীয় মানসিক আবেগগুলিকেও সুস্থির এবং সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়।

এর পরও সময় বিশেষে যদি অতিরিক্ত আবেগের উৎপত্তি হতে দেখা যায়, সেক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিক্রিয়া গুলিকে বলপূর্বক দমিয়ে রাখা উচিত নয়। উত্তেজনা নিবারণের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হল কোন কিছুর মাধ্যমে তাদের মন থেকে নিষ্কাশিত করে দেওয়া।

Otirikto rag hole ki hoy

চিন্তা ভাবনা এবং কাজ করতে গিয়ে মস্তিষ্কের শক্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ, সু সঙ্গত এবং সীমিত মাত্রায় খরচ হয়ে থাকে কিন্তু মানসিক উত্তেজনার পরিস্থিতিতে শক্তি খরচের অনুপাত অত্যধিক বেড়ে যায়।

উদ্বেগ, চিন্তা, ভয়, শোক, উদাসীনতা ইত্যাদি হীনমন্যতার সৃষ্টি করে এবং ক্রোধ, অবেশ, কাম ভাবনা, অস্থিরতার মত প্রসঙ্গে উত্তেজনার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। উভয় পরিস্থিতিই মানসিক ভারসাম্যে তেমনই তারতম্যের সৃষ্টি করে, যেমন জোয়ার ভাটার উভয় পরিস্থিতিই সমুদ্রে এক সমান উথাল পাথালের সৃষ্টি করে।

হতাশা এবং প্রসন্নতা এই দুটির অতি মাত্রায় মনে যে পরিমাণ আবেশের সৃষ্টি হয়, তার কারণে সঠিক চিন্তা করা এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।

মানুষ যখন ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে, তখন তার মনে অসাফল্য ও নিরাশাজনক চিন্তা ভাবনা ভর করে।

শরীর ও মনের সম্পর্ক একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল। মন প্রসন্ন থাকলে শরীরও সক্রিয় থাকবে আর যদি মনে কোনরকম হতাশা থাকে, তাহলে কেবল ক্রিয়াশীলতায় তারতম্যই দেখা দেবে না বরং তার সাথে অসঙ্গতি জুড়ে গেলে, অল্প বিস্তর যা কিছু কাজ করা সম্ভব হয়েছিল তাতেও ভুল হয়ে যাবে এবং ক্ষতি না করার চাইতেও বেশী চিন্তার কারণ হয়ে পড়বে।

মানসিক অবস্থাকেই ইংরেজিতে মুড বলে। মুড অনুকূল হলে, মানুষ কাজের উপর কর্তৃত্ব বিস্তার করে কিন্তু মুড যদি প্রতিকূল হলে কাজ মানুষের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে নেয়।

মন নিজে থেকেই কিছু কাজকর্ম সম্পন্ন করে, কিছু কাজ তাকে ইন্দ্রিয়ের সহায়তায় করাতে হয়। চিন্তাভাবনা, মনন, ধ্যান, কল্পনা, পরিকল্পনা, নিষ্কর্য, সিদ্ধান্ত ইত্যাদি কাজগুলি সে নিজেই সম্পন্ন করে নেয়। চলা ফেরা, খাওয়া দাওয়া, দেখা শোনা, কথা বলার মত কাজগুলি তাকে ইন্দ্রিয়ের সহায়তায় সম্পন্ন করাতে হয়।

মনের দাসত্ব এক নিকৃষ্ট স্তরের পরাধীনতার সমান। দাস তবুও নিজের আহার ও বিশ্রামের জন্য সময় পেয়ে যায় কিন্তু মনের দাস দিনে রাতে কখনই শান্তিতে থাকতে পারে না। তার পক্ষে স্বাধীনভাবে কিছু করা তো দূরের কথা, এমন কি সে বিষয়ে ভাবতেও পারে না।

মনই হল মানুষের উত্থান, পতন এবং মোক্ষলাভের মূল কারণ। যদিও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পরিস্থিতিকেই দোষ দেওয়া হয়, কিন্তু পরিস্থিতিই যদি একমাত্র কারণ হত, তাহলে একই পরিস্থিতিতে থেকেও সকলে না হোক অন্ততঃ অধিকাংশ মানুষেরই একই পথ অবলম্বন করা উচিত ছিল, কিন্তু তা হয় কোথায়? যথেষ্ট ভাল পরিস্থিতি এবং সমস্ত রকমের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অনেকে কত নিকৃষ্ট কাজ করে।

এর বিপরীতে ভীষণ বিপত্তি এবং অত্যন্ত অভাবের পরিস্থিতি সত্ত্বেও অনেকে নৈতিক মূল্যবোধ ও সদাশয়তা বজায় রাখে।

Humans are just and emotional creatures

মানুষরাই একমাত্র কাঁদতে কাঁদতে জন্মগ্রহণ করে, সারা জীবন অভিযোগ জানাতে জানাতেই একদিন প্রাণত্যাগ করে। অন্যান্য প্রাণীদের জীবনে তেমন কোন সমস্যাই থাকে না কিন্তু মানুষরা বিচারশীল এবং ভাবপ্রবণ হবার ফলে ছোট খাটো ঘটনায় বিচলিত হয়ে নিজেদের প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকে।

কেউ জাগতিক সুখ সুবিধা পেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে কেউ আবার মানসিক শান্তি হারিয়ে কষ্ট ভোগ করে। সম্প্রতি এই সমস্যাগুলি আরও বেশী জটিল হয়ে পড়েছে।

সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে নতুন সমস্যারও উৎপত্তি হতে শুরু করেছে। আজকের এই যান্ত্রিক সভ্যতা মানুষের জন্য যে সমস্ত নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে, তাদের মধ্যে প্রধান হল মানসিক উদ্বেগ।

নিজেকে সবসময় কোন না কোন কাজে ব্যস্ত রাখাও অনেক প্রকার সমস্যার সাথে সাথে মানসিক উদ্বেগের কবল থেকে মুক্ত হবার অব্যর্থ উপায়। মহত্ত্বাকাঙ্খা এবং ক্ষমতার সামঞ্জস্যও উদ্বেগের সম্ভাবনাকে অনেক কম করে দেয়।

প্রত্যেকটি মানুষের মনেই বর্তমান অবস্থা থেকে উন্নীত হয়ে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছানোর আকাঙ্খা থাকে। নিশ্চিন্ততাকেই নিজের লক্ষ্য তৈরী করে নেওয়া উচিত কিন্তু তার জন্য অধৈর্য হওয়া কিংবা তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। সিঁড়ির এক একটি ধাপ অতিক্রম করেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হতে পারে।

উদ্বেগের মাধ্যমে উৎপন্ন শারীরিক ব্যাধির হাত থেকে নিষ্কৃতিলাভের জন্য আস্থাবান হওয়া একান্ত প্রয়োজন। ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করার বিষয়ে অনেকের আপত্তি থাকতে পারে কিন্তু নিজের প্রতি আস্থা তো অনায়াসে রাখা যায়।

Why is inferiority complex in people’s minds?

হীনমন্যতার ভাবনায় জর্জরিত মানুষের স্বভাব অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে। তারা কোন সাধারণ এবং সঠিক কথাও কারো কাছে সহজে প্রকাশ করতে পারে না। এই ভেবে কারো সামনে মুখ খুলতেই ভয় পায় যে, যা কিছু সে বলতে চাইছে, তা শুনে কেউ যদি ভুল বোঝে, রুষ্ট না হয়ে পড়ে আর অশোভন আচরণ না করে বসে! প্রকৃতপক্ষে তেমন পরিস্থিতি দেখা দিলেও, তাতে কোন ক্ষতি হয় না।

কিন্তু হীনমন্যতায় আক্রান্ত মানুষরা অকারণে এতটাই ভয়ভীত হয়ে পড়ে, যার ফলে যতই ক্ষতি হোক্ তবুও তারা কিছুতেই নিজের মনের কথা সরল সোজা ভাবে বলার মত সাহসও জোটাতে পারে না।

প্রয়োজনের সময় কোন কিছু না বলার মত সঙ্কোচ করে গেলে ভুল বুঝবার সম্ভাবনা স্বাভাবিক ভাবেই থেকে যায় এবং সেই কারণে সামনের ব্যক্তিটি সোজা কথার বিপরীত অর্থ ভেবে নিয়ে অপ্রত্যাশিত রূপে অস্বাভাবিক ও ক্ষতিকারক আচরণও করতে পারে।

মানুষের মনে হীনমন্যতাবোধ কেন উৎপন্ন হয়, এই বিষয়টিই বিচার্য। মনোবিদগণ এর অনেকগুলি কারণ বলেছেন। যেমন

  • ছোটবেলায় উপযুক্ত স্নেহাদরের অভাব,
  • পিতা মাতা এবং অভিভাবকদের উপেক্ষা
  • কারও উপহাসের পাত্র হয়ে পড়া ইত্যাদি

এই কারণগুলি ছোটবেলা থেকে এমনই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যার ফলে শিশুরা বড় হবার পরও আত্মহীনতার মত মহা ব্যাধির শিকার হয়ে যায়।

অসুস্থ, পঙ্গু, মন্দবুদ্ধি, দুর্বল বাচ্চারা বার বার বড়দের কাছে বকুনি শোনে। এর ফলে তাদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, তাদের অবস্থা অন্যান্যদের চাইতে হীনস্তরের এবং তাদের ভাগ্যও অত্যন্ত খারাপ।

সাধারণতঃ দেখা যায় যে, অনুন্নত শ্রেণীর নারী পুরুষরা নিজেদের অপরের তুলনায় হীন বলে মনে করে, যার ফলে তারা তাদের চিন্তা ভাবনাকেও সেই ধরণেরই করে রাখে।

Lack of disbelief

আত্মবিশ্বাসহীন, আত্মহীনতাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে সাহস ও ধৈর্য জোটানোর মত সামর্থ থাকে না। সেই কারণে তারা উদ্ধত আচরণের মাধ্যমেই লোকেদের নিজেদের প্রতি আকর্ষিত করার রীতি নীতি অবলম্বন করে এবং অনেক সময় অপরাধমূলক গতিবিধিও অবলম্বন করে থাকে।

সাধারণতঃ এই ধরণের গতিবিধি অবলম্বন এবং অপরাধ করতে গেলে যথেষ্ট সাহসের দরকার হয়, তাই হীন মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা এমন প্রকৃতির মানুষদের সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়ে, যারা এই ধরণের কু কর্মে লিপ্ত।

এই অসামাজিক লোকেদের সঙ্গলাভের পর তাদের মধ্যে অপরাধ মূলক কাজ করার মত দুঃসাহস উৎপন্ন হয়ে যায় এবং এই ধরণের কাজে অভ্যস্ত হয়ে তারাও গুন্ডাগিরিতে সংলগ্ন হয়ে নিজেদের আত্মগৌরব সম্পন্ন অনুভব করতে শুরু করে।

হীনমন্যতাই একমাত্র কারণ যার জন্য মানুষ নিজেকে উপেক্ষিত, তিরস্কৃত এবং হেয়স্তরের প্রতিপন্ন করে। একই সাথে অত্যধিক মাত্রায় বাহ্য আড়ম্বর এবং সাজ সজ্জার দ্বারা নিজের প্রতি অন্যান্যদের মনোযোগ আকর্ষিত করার প্রবৃত্তি অবলম্বনের প্ররোচনা দেয়, যাতে একাধিক মানুষকে নিজের প্রতি আকর্ষিত হতে দেখে হীনমন্যতার ক্ষতে সান্তনার প্রলেপ লাগানো যায়।

অত্যধিক আড়ম্বর প্রিয়, সাজ সজ্জার প্রতি আকৃষ্ট মানুষদের মধ্যে অধিকাংশই নিশ্চিতরূপে নিজেদের প্রতি উপেক্ষিত এবং হীন মনোভাব পোষণ করে।

তারা যতই নিজেদের বড়াই করুক অথবা আত্ম প্রশংসা শোনার বিষয়ে আগ্রহ দেখাক, তাদের মনের গভীরে এই অবদমিত আকাঙ্খা থেকে যায় যে মানুষরা যেন তাদের প্রতি আকর্ষিত হয়ে তাদের প্রতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *