Rog protirodh khomota baranor khabar রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি (increase immunity in bengali) সিস্টেম  বাড়ানো কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সকলেই জানি, গত কয়েক বছরে আমরা এর অত্যাবশ্যকতা সম্পর্কে অবগত ও হয়েছি, কারণ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা অতি সহজেই নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন,

Rog protirodh khomota baranor khabar রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

তবে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের শরীরে একদিনে তৈরি হয় না, এটি গঠন হতে অনেকটা সময় লাগে, এবং ধীরে ধীরে ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি পায়, আর ইমিউনিটি সিস্টেম স্ট্রং হতে অনেক রকম বিষয় কাজ করে, যেমন হতে পরে আমাদের লাইফ স্টাইল, খাওয়া দাওয়া, এক্সারসাইজ, ইয়োগা, এবং কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যেগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে,

Top 14 Rog protirodh khomota baranor upay

আজ আমরা জানবো এমন প্রাকৃতিক কিছু উপাদান এর বিষয়ে যেগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে খুব দ্রুত এবং কোনো রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সাইড ইফেক্ট ছাড়া বাড়িয়ে তোলা সম্ভব হবে,

শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম যদি ভালো হয় যেকোনো রোগের জন্য শরীর লড়াই করতে পারে, ছোট খাটো রোগ আক্রমণ করতে পারেনা, আর যদিও হয় খুব সহজেই শরীর নিজে থেকেই রিকোভার করে নিতে পারে,

সুতরাং আজ আপনি এখানে যে ১৪টি প্রতিষেধক বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর খাবার এর কথা জানতে পারবেন সেগুলো ইমিউনিটি সিস্টেম কে বাড়াতে অনেক সহায়তা করবে,

১) পেঁপে পাতা
পেঁপে পাতায় ফাইট্রো নিউট্রিশন কম্পাউন্ড থাকে, যেটা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে, এছাড়া পেঁপে পাতায় ভিটামিন A, B, C, E, এবং ভিটামিন K থাকে, এই ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর সাথে এতে থাকে মিনারেলস পাওয়া যায় যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন;

ডেঙ্গু রোগীদের পেঁপে পাতা সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, এর কারণ হলো পেঁপে পাতা প্লাটিলেট বৃদ্ধি করার উপাদান থাকে যার সাহায্যে দেহ বাড়তি এনার্জি গ্রহণ করতে পারে, এবং শরীরের ইনফেকশন গুলোর সাথে লড়াই করে অপসারণ করতে পারে,

২) তুলসী পাতা:
তুলসী পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সকলেরই প্রায় জানা, বহুকাল ধরে তুলসী পাতার রস ব্যাবহার হয়ে আসছে, আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে এটি বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান, যা কিনা ভেষজ ওষুধ তৈরি করেতে তুলসী পাতার জুড়ি মেলা ভার,

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তুলসী গাছের পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তুলসী পাতায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি পাইরেটিক প্রভৃতি উপাদান থাকে, যার কারণে এটি জ্বর সর্দি কাশি ও ব্যাথা বেদনার প্রতিষেধক হিসেবে দারুন ভাবে কাজ করতে সক্ষম,

যকৃৎ ভালো রাখতে তুলসী পাতাকে লিভার প্রটেক্টর হিসাবে ব্যবহার করা হয়, রক্তের শিরা উপশিরা গুলোকে স্বাভাবিক রাখে, যার কারণে তুলসী পাতার রস নিয়মিত সেবন করলে সহজে কোনো অসুখ দেহকে আক্রমণ করতে পারবে না,

৩) গুলঞ্চ
গিলয় বা গুলঞ্চ এর বিস্ময়কর কিছু গুনাগুন আছে, যা শরীরের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ পালন করে, যারা বেশির ভাগ সময়ই জ্বর এ ভোগেন তাদের জন্য গুলঞ্চ খুব ভালো কাজ করে, এর সাথে শ্বসনতন্ত্র সম্বন্ধীয় কোনো প্রকার সমস্যা থাকলে তার দুর করতে গিলয় বা গুলঞ্চ সহায়ক,
এছাড়া আমাদের ডাইজেশন সিস্টেম ও লিভারকে ভালো রাখে,

৪) মেথি দানা
রোগ প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে মেথি দানা ব্যাপক ভাবে কাজ করে, এর মধ্যে অনেক প্রকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে যেগুলো আমাদের শরীরের প্রধান অঙ্গ গুলো সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, যেমন লিভার, ল্যান্স; এছাড়া ডাইবেটিস ও আইরন ডেফিসিয়েনসি সমস্যায়, মুখ ও গলায় ইনফেকশন জনিত কোনো সমস্যা সমাধনের করতে মেথি দানা ব্যাবহার করা হয়,

৫) ডালিম বীজ
ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আরেকটি যে উপকরণ টি কাজ করে সেটা হলো ডালিম বীজ অর্থাৎ ডালিমের দানা, এতে থাকে অ্যান্টি ভাইরাস ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটি, আমাদের শরীরকে কোনো রকম ভাইরাস এবং ব্যাকটিরিয়া এর আক্রমণের থেকে রক্ষা করে, এবং ইমিউনিটি সিস্টেম কে বাড়িয়ে তোলে,

৬) ছাগলের দুধ
অনেকেই শুনে থাকবেন দেহের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দুর করতে অনেক প্রাচীন কাল থেকে ছাগলের দুধের সেবন করা হয়, এন্টি ইনফ্লোমেনট্রি উপাদান থাকে ছাগলের দুধের মধ্যে, হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, ইমিউনিটি সিস্টেম কে স্ট্রং করতে ছাগলের দুধে খুবই উপযোগী,

৭) পর্যাপ্ত ঘুম
ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়াতে দেহের সম্পূর্ণ রেস্টের প্রয়োজন পড়ে, আর রেস্ট আসে ঘুম থেকে, যেকোনো রোগ থেকে মুক্তি পেতে ঘুম খুবই জরুরি, ঘুমানো অবস্থায় যখন আমরা সুয়ে থাকি সেই সময় সাইটোকাইন প্রোটিন উৎপন্ন হয়, যেটা অনেক প্রকার ইনফেকশন থেকে লড়তে সাহায্য করে, আর শরীরকে সুস্থ সবল রাখে,

৮) ডায়েড:
খাদ্য তালিকায় বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করা প্রয়োজন, যেমন লেবু, টমেটো, আমলকি, প্রভৃতি, সব্জি আর ফল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী, তাই প্রতিদিন দুপুরে খাবারে যেকোনো শাখ গ্রহণ করা দরকার,

৯) ব্রেকফাস্ট:
প্রতিদিন সকালের খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য, হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ছোলা, বাদাম, ডাল, সোয়াবিন ইত্যাদি, আর আহার গ্রহণের সাথে সাথে সকালের সূর্যের কিরণ এর ভিটামিন D নেওয়া প্রয়োজন,

১০) অন্ত ব্যাকটিরিয়া
দই এবং মাখন এ যে ইনটেনসিয়াল ব্যাকটিরিয়া থাকে তা দেহে ইমিউনিটি সিস্টেম গঠন করতে সাহায্য করে, মধযাহ্নভোজে দই রাখতে পারেন,

১১) সকালে অনেকেই চা পান করেন, এই সময় চা এর সাথে আদার রস মিশিয়ে পান করুন, এবং সকালের খাবারে রসুন যুক্ত করে নিতে পারেন, আদা এবং রসুন খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে,

১২) ট্রেস বা চিন্তা
অনেক বেশি ট্রেস বা চিন্তা আমাদের মনে ভয় সৃষ্টি করে, এবং চিন্তা মনের সাথে সাথে দেহকে দুর্বল করে তোলে, তাই এমন অনেক চিন্তা আছে যেগুলো করার কোনো প্রয়োজনই নেই এরকম চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন,

১৩) এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম
ইমিউনিটি পাওয়ার বৃদ্ধি মরার আরেকটি সহজ উপায় হলো প্রতিদিন 20 থেকে 30 মিনিট যেকোনো এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম এর অভ্যাস করা, এটি করলে ট্রেস দুর হবে, দেহের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকবে, ক্ষুদা মন্দা, অনিদ্রা ইত্যাদির মতো রোগ থেকে মুক্তি মিলবে, যা সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন গঠন করেতে সাহায্য করবে,

১৪) জল পান
আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম সরাসরি জলের সাথে যুক্ত, শরীরে জলের লেভেল ইমিউনিটি এর জন্য খুবই গরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, সকালে উঠে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত 6 থেকে 8 গ্লাস পানি বা জল পান করা জরুরি,

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ

কি করে বুঝবেন আপনার ইমিউনিটি পাওয়ার কম না বেশি? রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ বোঝার জন্য কিছু টিপস নিম্নে আলোচনা করা হলো যেখান থেকে আপনি নিজেই আপনার ইমিউনিটি পাওয়ার সম্পর্কে জেনে নিতে পারবেন,

১) পেটে পরিষ্কার থাকা
যদি আপনার পেট কোনো কিছু ওষুধ সেবন ছাড়াই সকালে আপনা থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম ঠিক আছে, যদি পাচন প্রক্রিয়া ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত ভাবে কোনো প্রকার ওষুধের ব্যবহার করতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে শরীরের মধ্যে কোনো না কোনো সমস্যা আছে, আর সেই কারণেই খাবার সঠিক ভাবে পরিপাক হতে পারেনা,

২) শরীরের ওজন
আপনার ওজন কি স্বভাকি আছে? শরীরের উচ্চতা হিসাবে যতোটা ওজন হওয়া উচিত ঠিক ততোটাই কি আপনার ওজন? যদি এর উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে আপনার ইমিউনিটি স্ট্রিং আছে, শরীরের ওজন যদি উচ্চতার পরিপ্রেক্ষিতে কম বা বেশি হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি শরীরের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ শরীরের ওজনের উপর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে,

২) পরিষ্কার ত্বক
ত্বকে যদি কোনো প্রকার সমস্যা না থাকে ত্বক যদি পরিষ্কার থাকে তাহলে ইমিউনিটি সিস্টেম ঠিক আছে, যদি ত্বকে ফোরা, ফুসকুড়ি, চুলকানি, ছোপ পড়া ইত্যাদির মতো সমস্যা দেয় তাহলে এটি ইমিউনিটি পাওয়ার কম হওয়ার কারণেও হতে পারে,

৩) অলসতা
সবসময় শরীর দূর্বল থাকে কোনো কাজে ইচ্ছে না লাগা এরকম যদি হয় তাহলে ইমিউনিটি শক্তি কমের কারণে হতে পারে, খাবার গ্রহণের পর যদি অলসতা ভাব আসে তাহলে এটি কোনো বিষয় নয়, যদি দিনের বেশির ভাগ সময়ই শরীরে অলসতা থাকে তাহলে ইমিউনিটি শক্তি কম থাকার লক্ষণ,

৪) ক্ষিদে পাওয়া
যদি প্রচুর ক্ষিদে পায় তাহলে ইমিউনিটি পাওয়ার ঠিক আছে, আর যদি ক্ষুদা মন্দা হয় এর কারণ হলো শরীরের যে পাচন প্রক্রিয়া তা সঠিক ভাবে কাজ করছে না, যদি এরকম হয় তাহলে ইমিউনিটি পাওয়ার কম হতে থাকে,

৫) গভীর ঘুম
যদি রাতে ঘুম গভীর হয় এবং সকালে কোনো রকম ট্রেস অনুভব হয় না, তাহলে শরীরের ইমিউনিটি ঠিক আছে, অপর দিকে যদি ঘুম দেরিতে আসা বা রাতে ঘুম ঠিক না হওয়া বা অনিদ্রা জনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভোগা, এরকম হলে বুঝতে হবে ইমিউনিটি সিস্টেম ঠিক নেই,

How to increase immunity?

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম ঠিক রাখতে উপরিক্ত বিষয় গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে, এবং সঠিক শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যের নেওয়া আবশ্যক।