Rosun Khele Ki Hoy কাঁচা রসুন খেলে কি হয় রসুনের উপকারিতা অপকারিতা

বিস্তারিত জেনে নিন কাঁচা রসুন খেলে কি হয়? এবং রসুনের স্বাস্থ্যকর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে, রসুন হলো একটি সবজি জাতীয় খাবার ও তার সাথে বহুগুনে সমৃদ্ধ ভেষজ ওষুধ, রসুন আমরা প্রায় সবাই সেবন করে থাকি তরিতরকারির মাধ্যমে, কিন্তু আমরা কি জানি  রসুন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতোটা উপকারী?

রসুন এমন একটি বস্তু যেটা নিয়ে নতুন করে পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন নেই, রসুনের গুণগত মান ও উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সকলেরই প্রায় জানা অথবা লোক মুখে শোনা আছে,

Rosun Khele Ki Hoy রসুনের উপকারিতা অপকারিতা

রসুন কেবল খাদ্য দ্রব্য হিসাবেই নয় প্রায় পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি ওষুধ রূপেও ব্যবহার হয়ে আসছে, এটি শুধুমাত্র আমাদের দেশে নয় বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রসুনকে ঔষদ ও খাবার হিসাবে প্রয়োগ করা হয়,

তরিতরকারি ও খাবার কে আরোও বেশি টেস্টফুল করতে রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, কিন্তু রান্নার কাজে ব্যবহৃত রসুন তার ৯০% কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, যার কারণে এর সম্পূর্ণ কার্যকারিতা আমরা পাইনা,

রসুন এর যে কার্যকারিতা তা পূর্ণমাত্রায় আমাদের শরীরের তখনি গ্রহণ করবে যখন আমরা কাঁচা অবস্থায়  ওষুধ হিসেবে সেবন করতে পারবো, রসুনে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, এছাড়া রসুনের আছে সেলেনিয়াম, আয়রন, ভিটামিন A ভিটামিন B1,  এবং অ্যালেন এর মতো পৌষ্টিক তত্ত্ব,

আপনি কি জানেন? ২৮ গ্রাম রসুনে শরীরের দৈনন্দিন চাহিদার ২৩% ম্যাগনিজ, ১৭% ভিটামিন B6, ১৫% ভিটামিন C, ৬% স্যালেনিয়াম, এবং ০.৬% ফাইবার থাকে,

Top 10 Benefits Of Garlic For Health In Bengali

আজ আমরা অবগত হবো রসুন খেলে কি হয়? এবং রসুনের নানাবিধ উপকারীতা ও অপকারিতা সম্বন্ধে, আর আশা রাখছি এগুলো জানার পর আপনিও নিয়মিত রসুন খেতে বাধ্য হবেন, আসুন তাহলে এক নজরে জেনে নেওয়া যাক যদি নিয়মিত উপায়ে রসুনের চার থেকে পাঁচ টি কলি খাওয়া যায় তাহলে তা আমাদের শরীরের জন্য কি কি লাভ হবে,

1. অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটি:
রসুনে জীবাণুনাশক উপাদান বা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটি পাওয়া যায়, যেটা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, খাবার খাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে ৪-৫ পুঁথি রসুন সেবন করেলে শরীরের খারাপ ব্যাকটিরিয়া গুলোকে ধ্বংস করে, এবং খাবারকে সঠিক ভাবে ডাইজেস্ করে শোষণ করতে সাহায্য করে,

2. স্কিন ভালো রাখতে
রসুনের মধ্যে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল থাকার ফলে এটি ত্বকের সকল প্রকার সমস্যা যেমন চুলকানি, পিম্পোল, দাঁদ, এগজিমা প্রভৃতি চামড়া জনিত সমস্যা গুলোকে সরিয়ে তোলে, যদি আপনার ত্বক এজাতীয় কোনো সমস্যা থাকে তবে রসুনের ব্যবহার শুরু করতে পারেন,

3. কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করতে রসুন:
রসুন HDL (হাই-ডেন্সিটি লিপোপ্রোটিন) বা যেটাকে আমরা ভালো কোলেস্টরল বলি সেটা বাড়াতে সাহায্য করে আবার অপরদিকে LDL (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) বা খারাপ কোলেস্টরল কে কম করতে রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,

4. ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে রসুন:
শরীরের ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রন করতে রসুন সহায়ক, এছাড়া রসুন হার্ট মাসালস্ স্ট্রিং করে, এবং ব্লাড সার্কুলেশন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে,

তবে ব্লাড প্রেসার রোগীদের একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে রসুন রক্তেকে পাতলা রাখতে ব্যাবহার করা হয়, যদি আপনি কোনো প্রকার ব্লাড থিনিং মেডিসিন ব্যবহার করেন যেমন অ্যাসপিরিন, তাহলে রসুন সেবন থেকে পুরোপুরি বিরত থাকতে হবে,

5. সর্দি কাশি দূর করতে রসুনের ব্যবহার
ঠাণ্ডা লাগা রোগ যেমন জ্বর সর্দি কাশি দূর করেতে রসুন হলো একটি মহাঔষধি, প্রাচীন যুগ থেকে এর ব্যাবহার চলে আসছে, যা বর্তমানেও অপরিবর্তিত রয়েছে,

তবে ঠাণ্ডা লাগা সমস্যা দূর করার সরাসরি রসুন সেবনের করা উচিৎ নয়, কারণ রসুনের মধ্যে যে রস থাকে তা গলার মধ্যে প্রবেশের ফলে কাশি বেশি হতে থাকে, যার ফলে জ্বর কাশি বেশি হতে পারে, রসুন কে অল্প তেলে ভালো করে ভেজে নিয়ে এই ভাজা রসুনের সকাল সন্ধ্যেয় সেবন করা যায় তাহলে ভালো উপকারিতা মিলবে, এবং দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা সর্দি ও ঠাণ্ডা লাগা রোগ দুর করা সম্ভব হবে,

6. প্রোস্টেট বা ইউটিআই
যারা প্রোস্টেট সমস্যায় ভোগেন বিশেষ করে বয়স্কো যারা তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি আসে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রোস্টেট এনলারজমেন্ট বা মূত্রথলি বৃদ্ধি হয়ে যাওয়া, প্রস্বাব করতে গেলে সমস্যা দেখা দেয়, এবং ইউরিন পাস করার সময় বল প্রয়োগ করতে হয়, এবং ইউরিন ফোঁটা ফোঁটা হয়ে প্রবাহিত হয় তারা প্রতিদিন রসুনের সেবন করতে পারেন,

এছাড়াও ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন যাদের দেখা দেয় বা বয়স্ ৪৫ পার হয়ে গেছে তারা অবশ্যই রসুনের প্রয়োগ শুরু করে দিতে পারেন,

7. ওজন কমাতে রসুনের ব্যবহার:
অনেকেই চায় শরীরের অবাঞ্ছিত মেদ বা চর্বি হ্রাস করতে, এবং শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে, তাদের জন্য রসুন হলো একটি কার্যকরী উপকরণ,

ওজন কেনো বাড়ে? যদি এটি জানতে চাই তাহলে এর উত্তর হলো, যদি আমাদের লিভার সঠিক ভাবে তার কর্মক্ষমতা সম্পাদন না করতে পারে তবে তাহলে অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট শরীরের মধ্যে জমা করতে থাকে, এবং লাভারের মধ্যেও ফ্যাট জমতে থাকে যেটাকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়, আর দেহের অন্যান্য অংশে এই ফ্যাট ছড়িয়ে পড়তে থাকে, যার কারণে ওজন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বেড়ে যেতে থাকে,

খালি পেটে রসুন সেবন করলে ধীরে ধীরে লিভারের যে কার্যক্ষমতা তা সঠিক হতে থাকে, এবং শরীরে ফ্যাট জমা হতে দেয়না, যার ফলে শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে,

8. ব্যাথা বেদনা দূরীকরণে রসুনের প্রয়োগ:
রসুনে অ্যান্টি ইনফ্লোমেট্রি প্রপাটি থাকে, এটি শরীরের অরথারাইটিস এর ক্ষেত্রে যেমন  দেহের কোনো অংশে ব্যাথা হওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে ওঠা, হাঁটুর মধ্যে ব্যাথা, আঙ্গুলে টাটিয়ে যাওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে রসুন কাজ করে, এটি কেবল খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে তা নয়, রসুনের তৈল গরম করে ওই স্থানে ম্যাসাজ হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে,

9. দাঁতের ব্যাথা দূর করতে রসুনের ব্যবহার
রসুনের একটি কোসা নিয়ে ভালো করে পিষে নিয়ে দাঁতের গোড়ায় লাগিয়ে রাখলে ব্যাথা কমবে,

10. মধু ও রসুন এর উপকারিতা
কেউ কেউ এমন আছেন যাদের কাঁচা রসুন খাওয়ার ফলে পেটে জ্বালা হতে থাকে, এরকম হলে কাঁচা রসুন সেবন না করে, ২০০ গ্রাম রসুন নিয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিয়ে ১০০ গ্রাম মধু মিশিয়ে একটি কাঁচের পাত্রে রেখে দিন, আর প্রতিদিন সকালে এই কাঁচা রসুন ও মধু মিশ্রণটি ভালো করে চিবিয়ে খেতে পারেন, এই রসুন আর মধু খালি পেটে ১ সপ্তাহ খেলে আপনি এর উপকারিতা নিজে থেকেই বুঝতে পারবে,

• কাঁচা রসুন খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম

এখন আমরা রসুন কিভাবে খেতে হয় সে সম্পর্কে জেনে নেবো, সাধারণত ভালো ফল পেতে হলে সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়া দরকার, তবে সকলের শরীরের প্রকৃতি এক রকম নয়, তাই আপনি রসুন কি কারণে সেবন করতে চাইছেন তার উপরেও রসুন খাওয়ার সময় ও নিয়ম নির্ভর করে,

রসুন গরম জাতীয় খাবার তাই যদি সকালে খালি পেটে রসুন খেলে কোনো রকম সমস্যা দেখা দেয় তাহলে রসুন কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে রসুন গুলকে ভিজিয়ে রেখে সকালে খতে পারেন, এটি করা ফলে রসুনের যে গরম ভাব সেটা কমে যাবে,

যদি রাতে রসুন খাবার প্রয়োজন পড়ে তাহলে সরাসরি কাঁচা রসুন না খেয়ে দুটি কোষা নিয়ে ঘী এর সাথে মিশিয়ে ভাল করে রসুন গুলকে ভাজা করে নিয়েও খেতে পারেন, এতে রসুনের যে গন্ধ তা কম হবে, এবং এটি ঔষধ এর মতো কাজ করবে,

ঠাণ্ডা কলে যদি এক পুঁথি রসুন খেয়ে সোয়া যায় তাহলে ঠাণ্ডা কম অনুভূত হবে,

• সারাদিনে কতো গুলো রসুন খাওয়া দরকার

একদিনে ২ থেকে ৩ টির বেশি রসুনের কলি খাওয়া উচিৎ নয়, রসুন বেশি খেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পরে,

কিছু মানুষ মনে করেন রসুন একটি গরম জাতীয় খাবার তাই এটি গরম কালে খাওয়া ঠিক নয়, তবে এটি গরম এবং শীত কাল দুই সময়েই খাওয়া যাবে, কেবল গরম কালে এটি কম মাত্রায় সেবন করতে হবে, যদি শীতের সময় দুটি কলি সেবন করেন তাহলে গরম কালে একটি কলি সেবন করা যাবে,

• রসুন খাওয়ার অপকারিতা

আমরা সবাই জানি সবার স্বাস্থ্যের ধরণ এক রকম হয় না, তাই সব খবর সবার জন্য সমান ফল দায়ক নয়, সুতরাং এখন আমরা জানবো কাদের ক্ষেত্রে রসুন খাওয়া প্রযোজ্য নয়, রসুন খেলে কি ক্ষতি পারে,

যাদের লিভার কমজোর এবং লিভারে কোনো রকম সমস্যা আছে তাদের কাঁচা রসুন খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে,

লো ব্লাড প্রেসার প্রেসেন্ট দের রসুন খাওয়া পরিত্যাগ করতে হবে,

গর্ভাবস্থায় বা প্রেগনেন্ট মহিলাদের কাঁচা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে,