Symptoms of Mental imbalance in Bengali manosik rog

মস্তিষ্ক মানবসত্তার মুখ্যকেন্দ্র; এর শক্তি অপরিসীম। এই শক্তিকে যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় তাহলে মানুষ তার অভীষ্ট প্রগতির লক্ষ্যে ক্রমশঃ এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ এতই বিলক্ষণ, যার সাহায্যে ভৌতিক সম্পন্নতার অনেক কিছুই উপলব্ধ হতে পারে।

symptoms of mental imbalance in bengali

মস্তিষ্ক যতটা শক্তিশালী ঠিক ততটাই কোমল। এর সুরক্ষা ও সক্রিয়তা বজায় রাখার জন্য একে অনাবশ্যক গরমের কবল থেকে রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। একে দিয়ে সঠিক কাজ করাতে হলে এর সুষম অবস্থা বহাল রাখতে হবে।

Symptoms of mental imbalance in Bengali language

প্রখর রোদ, গরম জল, রসায়ন ইত্যাদি বাইরে থেকে মস্তিষ্ককে উত্তপ্ত করে, কিন্তু শরীরের আভ্যন্তরীণ উত্তাপের ফলেও এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এই উত্তেজনার পরিমাণ যে হারে বৃদ্ধি পাবে মানসিক সূক্ষ্ম তত্ত্বগুলিও ততটাই স্থায়ীরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।

আবেশের বশবর্তী মানুষ অর্দ্ধ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পৌঁছে যায়। সেক্ষেত্রে তার আচার ব্যবহার, কল্পনা, নির্ধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি সবকিছুই বিচিত্র ধরণের হয়ে ওঠে। ক্রোধের বশীভূত মানুষের গতিবিধি ভালভাবে লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায় যে তার পাগলের পর্যায়ে পৌঁছে যেতে খুব একটা দেরী নেই।

অত্যধিক ক্রোধগ্রস্ত হবার ফলে মস্তিষ্কের জলীয় পদার্থগুলি রীতিমত ফুটতে শুরু করে। তাদের সময়মত ঠান্ডা না করা গেলে মানসিক রোগ থেকে আরম্ভ করে হত্যা কিংবা আত্মহত্যার মত নিষ্ঠুর কাজ করে ফেলার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

রাগে জর্জরিত চেহারা রাক্ষসের মত হয়ে ওঠে। চোখ, মুখ, নাক, কান ইত্যাদিতে রাগের প্রত্যক্ষ
লক্ষণ ফুটে ওঠে। অনর্গল অশিষ্ট শব্দের উচ্চারণ হতে শুরু করে। রক্তপ্রবাহে দ্রুতগতির ফলে শরীরে জ্বালা ধরে যায়। হাত পা কাঁপতে শুরু করে এবং গায়ের লোমগুলি দাঁড়িয়ে পড়ে।

রক্তচাপে সাধারণতঃ দু রকমের ব্যতিক্রম দেখা যায় – একটি উচ্চ রক্তচাপ অপরটি নিম্ন রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপে ( হাই ব্লাড প্রেশার ) শারীরিক অস্থিরতার কারণে কষ্ট অনুভব হয়। নিম্ন রক্তচাপের ( লো ব্লাড প্রেশার ) লক্ষণ কিছুটা ভিন্ন হলেও তাতে কিন্তু একই পরিমাণ কষ্ট হয়ে থাকে।

ক্রোধকে উচ্চ রক্তচাপের সাথে আর হতাশাকে নিম্ন রক্তচাপের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। বিদ্বেষ, ঘৃণা, আক্রমণ, বিনাশের মত নিষ্ঠুর প্রকৃতির বিচারধারা এবং কার্যগুলিকে ক্রোধের শ্রেণীভুক্ত করা যায় আর নিরাশা, দুশ্চিন্তা, শোক, ভয়, সঙ্কোচের মত নিষ্ক্রিয়তা উৎপন্ন করার প্রবৃত্তিগুলিকে হতাশার শ্রেণীভুক্ত করা যায়। এদেরই আবার জোয়ার ভাটার সমতুল্য অস্থিরতা ও অসঙ্গতি উৎপন্ন করার কারণও বলা চলে।

উত্তাল সমুদ্রে সাঁতার কাটা যে কত কঠিন , তা সকলেই জানে।

শোকগ্রস্ত, ভয়ভীত, হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির মনোদশা তার সুস্থ সবল শরীরকে দেখতে দেখতে জরাজীর্ণ করে তোলে। চেহারায় মৃত্যুর ছায়া ফুটে ওঠে। গলা দিয়ে ঠিকমতো আওয়াজ বেরোয় না। সারা শরীর যেন অবশ হয়ে পড়ে , কিছু করবার মত ক্ষমতাও থাকে না। ক্ষিদে তেষ্টা থাকে না, সহজে ঘুম আসতে চায় না ইত্যাদি।

ক্রোধের বশবর্তী হলেও অনেকটা এ রকমই হয়ে থাকে। পার্থক্য কেবল এটুকুই যে হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় বরফ জমা ও গলার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় আর ক্রোধগ্রস্ত হলে উত্তেজনার আগুনে উত্তপ্ত ও ফুটন্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। সাধারণতঃ এই দুটি পরিস্থিতিই অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এতে কেবল মস্তিষ্কই নয় বরং শরীরের স্বাভাবিক গতিবিধি সঞ্চালন করাও রীতিমত দুষ্কর হয়ে পড়ে।

আবেশের ফলে মানুষের শরীরে কি ধরণের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় ? এর পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে মানুষের স্বাভাবিক কর্ম ক্ষমতাগুলি এ সবের কারণে অত্যধিক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চোখ, নাক, কান, জিভ ইত্যাদি কর্মেন্দ্রিয়গুলি অত্যন্ত কষ্ট সহকারে নিজেদের কাজগুলি কোনমতে সম্পন্ন করতে পারে।

যেমন, জিভের স্বাদ বলতে কিছুই থাকে না, ক্ষিদে নষ্ট হয়ে যায়, কান একটা শুনতে আরেকটা শোনে, চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির মধ্যে থেকে সামান্য কয়েকটির কথা মনে থাকে, শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়, রোমাঞ্চ জেগে ওঠে, শ্বসন ক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি হয় এবং হৃদস্পন্দন ও রক্তপ্রবাহের গতি তীব্র হয়ে পড়ে।

এই সমস্ত লক্ষণগুলি একত্রিত হয়ে জীবনীশক্তিকে অত্যধিক মাত্রায় বিনষ্ট করে দেয়। এ সব তো কেবল কদাচিৎ ঘটনার বিষয়। এই অসঙ্গতি যদি অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায় এবং স্বভাবে পরিণত হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে ব্যক্তিত্বের স্থিরতা এবং সমস্ত সুখের সম্ভাবনার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।

পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকেই মানসিক ভারসাম্যহীনতার প্রধান কারণ মনে করা হয়। অনেক সময় এ ও বলা হয় যে ঘটনাক্রমেই হঠাৎ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, তাতে আমার কী দোষ? যুক্তিটি খুবই সহজ ও সঠিক মনে হলেও আদৌ তা বাস্তবিক নয়।

একই পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির উপর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। সামান্য প্রতিকূলতায় কোন ব্যক্তি অস্বাভাবিক ঘাবড়ে যায়, অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ে, আবার অপর এক ব্যক্তি ঠিক তেমনই কিংবা তার চেয়েও অধিক প্রতিকূলতায় নিজের মানসিক সামঞ্জস্য যথাযথ বজায় রাখে। সেগুলিকে জীবনের স্বাভাবিক জোয়ার ভাটা বলেই ধরে নেয় আর সে সবের জন্য অহেতুক উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন বোধ করে না।

তার প্রতিক্রিয়া কেবল সমস্যা সমাধানের চিন্তা করা এবং তার উপযুক্ত সাধন জোটানোর কাজেই ব্যাপৃত থাকে। অহেতুক উদ্বিগ্ন হয়ে কোনরকম অসঙ্গতিকে আমন্ত্রণ জানানোর মত মূর্খতা তার আদৌ পছন্দ নয়।

মনোরোগ সাধারণতঃ দৃশ্যগোচর হয় না। তার মাধ্যমে যা কিছু ক্ষতি হয়, সেগুলিও প্রত্যক্ষরূপে চোখে পড়ে না, কিন্তু কিছুটা মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করলে সহজেই বোঝা যায়।

সাধারণতঃ মানসিক রোগীদের দেখলে মনে হয় তারা কেবল অবাধ্যতা করে আর উচ্ছৃঙ্খলতাই দেখিয়ে থাকে। তাদের দেখে কখনও মনেই হবে না যে, তারা কোনরকম বিকৃতির দ্বারা গ্রসিত হয়ে নিজেদের জাগতিক ক্ষমতাগুলি হারিয়ে ক্রমশঃ বিকৃতির পাঁকে তলিয়ে যাচ্ছে।

মানসিক রোগের কারণে মনুষ্য সমাজের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়ে থাকে, তা শারীরিক অসুস্থতার কারণে হওয়া ক্ষতির তুলনায় কোনও অংশেই কম ভয়াবহ নয়। শারীরিক অসুস্থতা এমন কি পঙ্গু হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর অসংখ্য ব্যক্তি অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ কাজে সাফল্য অর্জন করেছে, কিন্তু মানসিক দিক থেকে পঙ্গু হয়ে যাবার পর উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, তেমন একজন ব্যক্তিও আজ অবধি চোখে পড়ে নি।

পূর্ণ মাত্রায় পাগলের সংখ্যা দিনের পর দিন এমন ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যার তুলনায় পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত রোগগুলিই অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে। কয়েদখানার চাইতেও যদি পাগলা গারদের সংখ্যা বেশী হয়, তবেই উপদ্রব সৃষ্টিকারী পাগলদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।

আধ পাগল, উন্মাদ, ভারসাম্যহীন, অসঙ্গত, ব্যতিব্যস্ত অদুরদর্শী মানুষদের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গেছে , যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক মানুষের খোঁজ করা হলে দেশের সম্পূর্ণ জনসংখ্যার যৎসামান্য অংশই পাওয়া যাবে। শারীরিক দিক থেকে রুগ্ন মানুষের তুলনায় মানসিক বিকৃতিগ্রস্তদের সংখ্যাই অধিক। এই অসম্পূর্ণ ও অসঙ্গত মানুষদের সামাজিক উন্নতি এবং সুব্যবস্থায় অবরোধ সৃষ্টিকারীই বলা চলে।

প্রকৃতপক্ষে অপরাধও এক ধরণের আবেশ, যাকে মানুষ এক প্রকার উন্মত্ত অবস্থাতেই সম্পন্ন করে থাকে। চোর বদমায়েশরা নিজেদের কুকর্মের ক্ষতিকারক দিকগুলি ভালভাবেই জানে। এর জন্য তারা অনুশোচনাও করে।

ভালমানুষীর পথে চলে অনেকে কত উন্নতি করেছে, কত সম্মান লাভ করেছে এই তথ্যগুলি তারা চাক্ষুষ দেখতেও পায় এবং শুনে থাকে। অন্যান্যরা তাদের বোঝালে তারা বুঝতেও পারে। কিছু সময়ের জন্য তাদের বিবেকও জেগে ওঠে আর ভাল মানুষের মত থাকারও চেষ্টা করে।

কিন্তু পুরানো অভ্যাসগুলি যখনই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তখন তাদের পক্ষে নিজেকে সংবরণ করা সম্ভব হয় না। এমন কি মানুষ তখন ছেড়ে দেওয়া অপকর্মগুলি পুনরায় করার জন্য অসহায় হয়ে পড়ে এবং তাদের সম্পন্ন করেই ছাড়ে।

মনোরোগ শাস্ত্রমতে, জ্বর বা মাথাব্যথায় আক্রান্ত মানুষদের যেমন অবস্থা হয়, এদের এই অসহায় অবস্থাও অনেকটা সেই ধরণের।

মানসিক দৃষ্টিতে ভারসাম্য এবং সঙ্গতিই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ। মস্তিষ্কে অসংখ্য সঞ্চারক স্নায়ু থাকে, তারা পরস্পরের সাথে সুসংবদ্ধ হয়েই সহযোগের দ্বারা উৎপন্ন ক্ষমতার মাধ্যমে যে যার নিজেদের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করে।

তাদের এই বোঝাপড়ায় যদি কোনপ্রকার ব্যতিক্রম ঘটে এবং পারস্পরিক অসঙ্গতির সৃষ্টি হয়, তাহলে বিভিন্ন ধরণের ছোট বড় মানসিক রোগের প্রকোপ দেখা দিতে শুরু করে।

মানসিক ভারসাম্যের চারটি পক্ষ

  1. এফেক্ট – সতর্কতা , সচেতনতা
  2. থট – বিচার ধারা, কল্পনা
  3. বিহেভিয়ার- আচার ব্যবহার , অভ্যাস
  4. মুড – উৎসাহ , উদ্দীপনা

এদের মধ্যে কোনটির ভারসাম্য কার সংমিশ্রণে কতটা মাত্রায় বিগড়ে যায়, তারই ভিত্তিতে মনোরোগের বিভিন্ন স্বরূপ গড়ে ওঠে এবং লক্ষণ প্রকাশ পায়।

সতর্কতার অভাবে মানুষ এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা যে অন্যান্যরা তার কাজের সম্বন্ধে কি বলবে বা কি ভাববে? তার কোন কাজের কী পরিণাম হবে তাও বুঝতে পারে না। নিজের মর্জিই তখন তার কাছে সঠিক বলে মনে হয়। অন্যান্যদের ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়ার পরিণামের বিষয়গুলি কিছুতেই তার মাথায় আসে না।

কল্পনার পরিধিও সীমিত হয়ে পড়ে। সে তখন বর্তমান সময় এবং নিজের মন এই দুটিতেই আবদ্ধ হয়ে পড়ার ফলে এমনই কিছু কাজ করে ফেলে যেগুলি একদিকে যেমন উপহাসাস্পদ একইসাথে যথেষ্ট ক্ষতিকারকও হয়ে থাকে।

এ সব কাজে কোনরকম আর্থিক ক্ষতি না হলেও অন্যেরা তার এই কাজগুলি দেখে মন্দবুদ্ধি অথবা শিশুসুলভ বুদ্ধির পরিচায়ক মনে করে এবং তাকে কোনরকম দায়িত্ব দেবার আশা ছেড়ে দেয়। অনেকে তাকে বোকা বানায়, উত্যক্ত করে নিজেদের ও অপরের মনোরঞ্জন করে।

বিচার ধারায় অসঙ্গতির ফলে কল্পনাশক্তিও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। সাধন উপকরণ এবং পরিস্থিতির সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞানের অভাবে তারা নিজেদের প্রতিটি কল্পনাকে অনায়াসে সম্ভবপর বলে মেনে নেয়।

তাদের এই কল্পনাগুলি পূরণ করার জন্য কতটা সময় লাগতে পারে এবং তার জন্য কি কি সাধন দরকার, তাও তারা অনুমান করতে পারে না।

কল্পনা এবং সাফল্যের মধ্যবর্তী পার্থক্য এবং অবরোধগুলির বিষয়েও তারা কোন রকম আন্দাজ করতে পারেনা, ফলতঃ তাদের মানসিকতাও অনেকটা সেই রূপকথার রাজ্যে বিচরণকারী শিশুদের মতই হয়ে পড়ে।

বহুচর্চিত সেই কাল্পনিক মুখব্যক্তিটিও সম্ভবতঃ এমনই কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিল। এভাবেই মানুষরা উল্টো চিন্তা করার ফলে সাধারণ দৈনন্দিন কাজের জন্যও নিজেদের অসমর্থ ভাবতে শুরু করে এবং অপরের সাহায্য ছাড়া কোন কিছু করবার মত সাহসও হারিয়ে ফেলে।

কোন মানুষের আচার ব্যবহার এবং অনুমানের বিষয়ে কোন প্রকার ব্যতিক্রম হলে, অন্যান্য মানুষদের ব্যবহার তার প্রতি কেমন ধরণের এবং কি উদ্দেশ্যে প্রেরিত হচ্ছে তার আন্দাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় শত্রুদের বন্ধু ভেবে নেবার মত পাগলামী করতেও দেখা গিয়ে থাকে।

অমুক ব্যক্তি আমার শত্রু, সে আমাকে বশীকরণ করে চলেছে। আমাকে মারবার, বিষ দেবার, পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার – যড়যন্ত্র করছে – এমন ধারণা করে সারাক্ষণ ভয়ে কাবু হয়ে থাকে। কত জন দুর্ঘটনা, মৃত্যু, আক্রমণ, হানি, বিচ্ছেদ, জেল ইত্যাদির ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়ে।

কোন বিপত্তির নিরাকরণ কি ভাবে করা উচিত। এটুকুও তারা নির্ধারণ করতে পারে না। এ ভাবেই অনেকে আবার নিজেদের অনেক সময় সিদ্ধপুরুষ, নেতা, বিদ্বান, রাজা ইত্যাদিও ভেবে নেয়।

তারা কখনও অত্যন্ত উৎসাহে, প্রসন্ন চিত্তে অনাবশ্যক রূপে হাসতে থাকে, উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে, বড় বড় আশা প্রকাশ করে আবার কখনও এমন হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ডুবে যায়, যা দেখে মনে হবে তার মাথার উপর হয়ত আকাশ ভেঙে পড়েছে।

অনেকের মনে আবার শরীরে কোন ভয়ঙ্কর রোগের প্রকোপ শুরু হয়ে গেছে অথবা অদূর ভবিষ্যতে তেমন কিছু হবার আশঙ্কা ঘিরে ধরে।

মস্তিস্কে আবেশ এবং উত্তেজনার ভয়ানক দুষ্প্রভাব পড়ে। অনেক সময় অবাস্তব কল্পনা করা এবং সাধন উপকরণের অভাবে সে সবের পূর্তি না হওয়ার ফলে অসফল হবার জন্য অনেকে দিশাহারা হয়ে পড়ে।

আর উত্তেজনার উত্তাপে মস্তিষ্কের কমনীয়তাকে জ্বালিয়ে ফেলে। অনৈতিক বিচারধারা তার নিজস্ব প্রকৃতি অনুযায়ী স্বাভাবিক ভাবেই ঘাতক রূপধারণ করে নেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *